গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ সকাল ০৮:০০ ঘটিকায় ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালী মডেল থানাধীন জয়নুল আবেদীন পার্ক সংলগ্ন সিভিল সার্জনের বাসভবনের উত্তর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারায় হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা এ লাশটিকে তার আত্মীয়-স্বজন সনাক্ত করেন। ভিকটিমের নাম হাসেম মিয়া (২৯), পিতা-মৃত জহির উদ্দিন ওরফে জহুর উদ্দিন, মাতা-মোছাঃ আম্বিয়া খাতুন, সাং-দাপুনিয়া কলাপাড়া, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহ যিনি পেশায় একজন মিশুক রিক্সাচালক। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় এজাহার দায়ের করলে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-২৬, তাং-১০/০২/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার
মাছুম আহাম্মদ ভূইয়া’র দিকনির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ফারুক হোসেন এর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নিমিত্তে মাঠে নামেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কোতোয়ালী ও গৌরীপুর থানা এলাকা থেকে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত
১। মোঃ আলমগীর (২০), পিতা-আইনুদ্দিন, মাতা-হাজেরা খাতুন, সাং-বাতিকুড়া, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ,
২। মোঃ রাকিবুল হাসান তপু (৩০), পিতা-নূর মোহাম্মদ এখলাছ উদ্দিন,মাতা-মোছাঃ রোমেলা খাতুন, সাং-কামারিয়া পূর্বপাড়া, থানা-তারাকান্দা, জেলা-ময়মনসিংহ,
৩। মোঃ রাকিব হাসান ওরফে রাকিবুল ইসলাম (২১), পিতা- মোঃ আব্দুল জব্বার, মাতা- মৃত খাদেজা ওরফে হামিদা খাতুন, সাং-হরিপুর, থানা-তারাকান্দা, জেলা-ময়মনসিংহ,
৪। মোঃ আরাফাত হোসেন বাবু (২৭),পিতা-মোঃ জেহার আলী ওরফে মনির হোসেন ওরফে মনির ড্রাইভার, মাতা-মোছাঃ পারভীন আক্তার, সাং-রামপুর (কুকরাইল পশ্চিমপাড়া বাজার সংলগ্ন), থানা-কালিহাতী, জেলা-টাঙ্গাইল, বর্তমান সাং-মাসকান্দা আকন্দবাড়ী রোড (পাসপোর্ট অফিসের পিছনে জনৈক আরিফের বাসার ভাড়াটিয়া), থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহ মোট ০৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরে ধৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত মর্মে জানান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ০৮/০২/২০২৪ তারিখ রাত ০৯.০০ ঘটিকার সময় ধৃত আলমগীর, রাকিবুল হাসান তপু, রাকিবুল, আরাফাত হোসেন বাবু ও পলাতক অপর একজন সহ মোট ০৫ জন একত্রে শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ স্মৃতিসৌধের মাঠে বসে একটি অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক অনুমান রাত ১২.০০ ঘটিকার সময় তারা শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ হতে ভিকটিম হাসেমের মিশুক রিক্সা ভাড়া করে সার্কিট হাউজ মাঠে নিয়ে যায় যায়। তারপর সার্কিট হাউজ মাঠে দাঁড়িয়ে মিশুক রিক্সা চালক হাসেমের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা এলোপাথাড়ি মারপিট করে বেড়িবাঁধের নিচে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। ধৃত আলমগীরের কোমরে পরিহিত বেল্ট দিয়ে ধৃত রবিন ভিকটিমের পা বাঁধে এবং গেঞ্জি দিয়ে আরাফাত হোসেন বাবু ভিকটিমের হাত বাঁধে। আরাফাত হোসেন বাবু ভিকটিম হাসেমের পরিহিত চাদর দিয়ে তার মুখ বাঁধে এবং সবাই মিলে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখে। এরপর আরাফাত হোসেন বাবুর পকেটে থাকা চাকু দিয়ে পলাতক রবিন ভিকটিমের বুকে ও পেটে একাধিক আঘাত করে এবং তাকে মাটিতে ফেলে রেখে সবাই দ্রত ভিকটিমের মিশুক রিক্সাটি নিয়ে শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ এলাকায় গিয়ে ধৃত আলমের কাছে নগদ ৩৪০০০/- টাকায় বিক্রি করেন। পরে মিশুক বিক্রির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ০৪ জন সহ মিশুক ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত আরো ০৩ জন, ফরহাদ (৩১), সুমন শেখ (৩৫) এবং আলম (৪০) সহ মোট ০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তদন্ত সূত্রে জানা জায় পূর্বে, ধৃত আসামী মোঃ আলমগীর (২০)-এর বিরুদ্ধে ০১টি হত্যা মামলা, মোঃ রাকিবুল হাসান তপু (৩০)-এর বিরুদ্ধে ০১টি হত্যা মামলা, মোঃ রাকিব হাসান ওরফে রাকিবুল ইসলাম (২১) এর বিরুদ্ধে ০১টি চুরি মামলা, মোঃ আরাফাত হোসেন বাবু (২৭) এর বিরুদ্ধে ০১টি হত্যা ও ০১ টি চুরি মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য, রাকিবুল ইসলাম তপু চরপাড়া মেডিকেল এর সামনে সংঘটিত শরিফ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী ছিলেন। উক্ত মামলায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছিলেন এবং ১৯ মাস জেলে থেকে গত ০২ মাস আগে জামিনে বের হন। পলাতক আসামী গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ সংক্রান্তে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ১৩/০২/২৪ তারিখ ১৫:০০ ঘটিকায় একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।