সোহেল রানা, রাজশাহী:
রাজশাহীর বাগমারার উপজেলায় আবারো শুরু হয়েছে অপরিকল্পিত পুকুরখনন। তবে পুকুরখনন সিন্ডিকেটের সদস্যরা পরিকল্পিত ভাবেই ম্যানেজের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে এই খননযজ্ঞ। এর ফলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি আবাদী জমিকে পুকুরে পরিনত করা হচ্ছে।
বাগমারা উপজেলার অনেক মাঠেই তিন ফসলি জমিতে শুরু হয়েছে সংস্কারের নামে মাটি বিক্রির জন্য পুকুরখনন। চোর-পুলিশ খেলায় বিভিন্ন কারণে ইচ্ছে করে হেরে যাচ্ছে পুলিশসহ প্রশাসন।
এদিকে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে আবেদন দিয়েও ফলাফল শূণ্যই থেকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে একদিকে আবেদনকারিরা পড়ছে বিপাকে এবং অন্যদিকে খননকারিরা হচ্ছে উৎসাহিত।
পুকুরখননে জেলায় কমেছে খাদ্য উৎপাদন, হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যিক মাছের খামার বেড়েছে বহুগুণ। কমেছে চারণভূমি, সংকট বেড়েছে পশু খাদ্যের। কৃষি জমি কমেছে প্রায় কয়েক হাজার হেক্টর । বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ব্যাহত চাষাবাদ।
জানা গেছে, পানি শুকানোর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একদিকে জোরেশোরে এবং অন্যদিকে চুপিসারে আবারো শুরু হয়েছে অপরিকল্পিত পুকুর খননযজ্ঞ। আর এ চিত্র জেলার প্রায় সব কটি উপজেলাতেই। বর্তমানে বাগমারা উপজেলায় বড়মারিয়ার বিল কার্তিক পাড়া পুকুরখনন এখন একেবারে খোলামেলা।
বাগমারার পুকুর খননকারী মোঃসোহেল প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলাচ্ছে পুকুরখননের কাজ । গত বছরের ৯ জানুয়ারী অবৈধ পুকুর খনন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় জনগন, তবে এতেও কোন কাজ হয়নি।
এদিকে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অপরিকল্পিত পুকুরখনন কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধি খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। পুকুর খননে মাছের লাভের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হচ্ছে কৃষকেরা। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেই অপরিকল্পিত পুকুর খননের মহোৎসব চলছে বলে জানিয়েছেন সচেতনমহল, পরিবেশবাদি ও ভুক্তভোগিরা।
শুধুমাত্র অপরিকল্পিত পুকুরখননের জন্যই রাজশাহী জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে দেখা দিয়েছে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন, দীর্ঘ মেয়াদি জলাবদ্ধতা, পুকুরখননে মাটি বহনে গ্রামীণ রাস্তা নষ্ট, ফসল উৎপাদন ব্যাহত, বিলের পানি বেরুনোর নালা (খাল, ড্রেনেজ) ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামের বাড়ি-ঘরে জলাবদ্ধতা, কৃষিজীবীদের মধ্যে বেকারত্ব বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনী নষ্ট। কৃষিকাজ না থাকায় যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হচ্ছে এবং সর্বপরি নগরীতে ভাসমান শ্রমিক বাড়ছে। অপরিকল্পিত পুকুরখননের ফলে এসব না সূচক ও নেতিবাচক প্রভাব দেখেও অজানা কারণে নিশ্চুপ আছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। সচেতনমহল, পরিবেশবাদি ও ভুক্তভোগিরা পরোক্ষ ও প্রত্যেক্ষভাবেই দোষারোপ করে আসছে তাদের।
জেলার কৃষি দপ্তর বলছে, বাণিজ্যিকভাবে এসব পুকুর খনন হয়েছে আবাদি জমিতেই। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননে জলাবদ্ধতায় প্রতি বছরই ব্যাপক ফসলহানি হচ্ছে। ফসল হানির পরিমান প্রতিবছরই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। পরিবেশের উপর বাড়ছে চাপ। এছাড়াও ফসল রোপনের আগেই ডুবে যাচ্ছে খনন এলাকা।
পরিশেষে এই অসাধু পুকুর খননকারী সোহেলকে আইনের আওতায় এনে তার প্রতি আইনি ব্যবস্থায় প্রশানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সচেতন স্থানীয় এলাকাবাসী।