নিজস্ব প্রতিবেদক :
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম বলেছেন, মিডিয়া হচ্ছে টুওয়ে কমিউনিকেশন। দেশের কোথায় কী হচ্ছে মিডিয়ার মাধ্যমে সরকার জানতে পারে। সামাজিক সমস্যা তুলে ধরা যেমনটা দায়িত্ব, একইসাথে সরকারের উদ্যোগ জনগণের কাছে প্রচার করাটাও মিডিয়ার দায়িত্ব। একটি সুস্থ জাতি গঠন করার জন্য সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে আবশ্যিকভাবে জনগণকে জানানো।
আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট আয়োজিত “ওয়ার্কসপ অন ফেক্টস ফর লাইফ উইথ ফিল্ড প্রেকটিস” শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন হয়। শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অতিরিক্ত সচিব এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি বলেন, সরকারের বিভিন্ন বিষয় আমরা প্রচার করে থাকি। জনগণ আমাদের সরাসরি স্টেকহোল্ডার। কার্যক্রমের পরিকল্পনা শুধু দাপ্তরিক চিঠির মধ্যেই সীমিত থাকলে হবে না। সরকারের মেসেজকে প্রচার করতে হবে। এ কর্মশালার মাধ্যমে যে মেসেজ আছে বা পাবেন, সেটা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবেন। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশু ও নারীকে উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা সমাজকে পরিবর্তন করতে চাই। শিশুদের সুস্বাস্থ্য ভাবে গড়ে তোলার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরো এগিয়ে দেওয়ার জন্য, অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়া করাবেন, সন্তানদের সবকিছু শিখানোর জন্য ইতিবাচক সহযোগিতা প্রদান করবেন। পিতা-মাতার কাছে আবেদন আঠারোর আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে নয়।
তিনি বলেন, আমরা জানি, পাঁচ বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই বিশ্বে প্রতিবছর গড়ে ৯০ লক্ষ শিশু মারা যায়। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। এ জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। তেমনিভাবে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ নারীদের উন্নয়নে সচেতনতাবৃদ্ধি করার বিষয়টি প্রচার করাও আপনাদের দায়িত্ব। দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালায় যে মডিউলগুলো রয়েছে, তার একটি অংশ মূলত শিশুদের সুস্থভাবে গড়ে তোলার জন্য পরিবার ও কমিউনিটির জন্য তথ্য রয়েছে। মায়ের গর্ভধারণ পর্যায় হতে শুরু করে শিশুর জন্ম, শিশুর অসুস্থতা, বেড়ে ওঠা, মাতৃত্ব ও পিতৃত্ব বিষয়ক বাস্তব সংগত উপদেশ এখানে উঠে আসবে। অনেকগুলো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এ প্রকল্পে অবদান রাখছে। UNICEF, WHO, UNESCO, UNFPA, UNDP, UNH, WFP, WB সংস্থাগুলো সরকারের সাথে শিশু ও নারী উন্নয়নে কাজ করছে।
শুরুতে জুলাই আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতি আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন অতিরিক্ত সচিব। সেই আন্দোলনে অবদান রাখা ও আহত ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ তরুণীসহ অন্যান্যদের সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক সুফী জাকির হোসেন এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। অন্যান্য অতিথির মধ্যে ছিলেন জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম, জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজিম উদ্দিন, জেলা তথ্য অফিসের উপপরিচালক শেখ মোঃ শহিদুল ইসলাম, জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের উপপরিচালক মোহা: আব্দুস সালাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ জেলার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের ৩০ জনেরও অধিক গণমাধ্যমকর্মী এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, ৫ই আগস্টের পর বর্তমান সরকার নানান আঙ্গিকে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করছে। নারী ও শিশুর সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, সচেতনতামূলক কার্যক্রম। আপনারা যারা সাংবাদিক প্রচার ও প্রসারে কাজ করছেন, আপনাদের মাধ্যমেই সচেতনতার প্রচার ও প্রসার আরো বেশি ঘটবে, এতে আরো সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ ও সমাজের দর্পন হিসেবে অভিহিত এ গণমাধ্যম বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করে রাষ্ট্রেকে সহযোগিতা করবেন। নারী ও শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায়গুলো উত্তরণে সমাজকে সহযোগিতা করবেন। এ ধরনের কর্মশালা ময়মনসিংহে বেছে নেওয়ার জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
জাতীয় গণমাধ্যমে ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, শিশু ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য যা দরকার তার অংশ হিসেবে এ ওয়ার্কসপ। শিশু ও মাকে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায় তার সচেতনতামূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করতে ওয়ার্কসপটি অবদান রাখবে। কর্মশালাটি সফল করতে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ বলেন, কর্মশালায় সম্পদব্যক্তিগণ নারী ও শিশু উন্নয়নে সচেতনতামূলক বিষয়ে সেশন পরিচালনা করবেন। কর্মশালার বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, জাতিসংঘের সাতটি বিভাগ/সংস্থা মিলে এ বিষয়ে কাজ করছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের আয়োজনে এ কর্মশালায় নারী ও শিশুর কাজের কিছু অংশ আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে। গুরুত্বের সহিত কর্মশালায় আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করছি।
জাতীয় গণমাধ্যমের ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সুফী জাকির হোসেন বলেন, দুই দিনব্যাপী কর্মশালার মাধ্যমে এ অঞ্চলের শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারীদের উন্নয়নে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো আমরা জানতে পারবো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা তথ্যগুলো আমরা পাবো। শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনারা সরাসরি মতামতে অংশগ্রহণ করছেন এতে কর্মশালাটি আরো সফল হবে। যে তথ্যগুলো আমরা এখানে প্রোভাইড করবো আপনাদের মাধ্যমে সেটা জনগণের কাছে ছড়িয়ে যাবে। কর্মশালার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন, জেলা তথ্য অফিস, পিআইডি, বেতার, বিটিভিসহ সংশ্লিষ্ট সকল সিস্টার্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
উদ্বোধন পরবর্তী সম্পদ ব্যক্তিগণ কর্মশালার সেশন পরিচালনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালাটি অভ্যন্তরীণ তাত্ত্বিক সেশনের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের কার্যক্রম রয়েছে।